SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

এ পাঠ শেষে আমরা-

পরিবেশ ও উপযোগিতা বুঝে স্বল্প ব্যয়ে বিভিন্ন রকমের গাছে গ্রাফটিং করতে পারব।

সেতু ও রিক্তা দুই বন্ধু। সেতুদের বাড়ি গাছ গাছালিতে ভরা। রিক্তা তাদের বাড়িতে এলেই পুকুর পাড়ে আমবাগানের ছায়ায় এক্কা দোক্কা, সাত গুটি, কানামাছি এসব খেলে। এবছর ওদের পুকুরঘাটের গাছটায় অনেক আম ধরেছে, রং টাও বেশ জমে এসেছে। লোভ সামলাতে না পেরে সেতুর মায়ের অনুমতি নিয়ে রিক্তা আর বন্ধু মিলে সেদিন গাছের ডালে উঠে কোচড় ভরে বেশ কয়েকটা আম পেড়ে আনলো। তারপর বল, হেনা, মিলনসহ সবাই মিলে ভাগাভাগি করে খেয়ে বেশ তৃপ্তি পেল। অপূর্ব স্বাদের এই আম খেয়ে সবাই মুগ্ধ। এতো সুস্বাদু আম রিক্তা এর আগে কখনও খায়নি। কৌতূহলী হয়ে সেতুর কাছে জানতে চাইলো, এটার বীজ রোপন করলে আমাদের বাড়িতেও এমন সুস্বাদু আম গাছ হবে? করিম চাচা পুকুরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তাদের কথা শুনে হেসে বললেন, 'শোনো, একাজে বীজও লাগবে না। তুমি চাইলে গাছটির ডাল কেটে নিয়ে তোমাদের কোনো টক আম গাছে লাগিয়ে দিলেও সেগাছে এরকম মিষ্টি আম ধরবে। এর নাম হলো গ্রাফটিং"।

সবাই অবাক হয়ে বলল, ‘তাই নাকি চাচা!’

করিম চাচা শুরু করলেন, 'গ্রাফটিং এর মাধ্যমে যদি মিষ্টি বা সুস্বাদু জাতের একটি ডাল তোমাদের টক আম গাছে এনে জোড়া লাগিয়ে দেয়া যায় তাহলে তোমাদের গাছের জোড়া দেয়া নতুন ডাল হতে ঠিক একইরকম সুস্বাদু ও মিষ্টি আম পাওয়া যাবে'।

রিক্তার অস্থিরতা বেড়ে গেল। বলল, চাচা, আপনি আগে আমাদের কথা দিন, কীভাবে একাজ করা যায় তা আমাদেরকে শেখাবেন'।

তাদের কৌতূহল দেখে করিম চাচা এক গাল হেসে বললেন, ঠিক আছে, তা নয় হয় শেখাবো। কিন্তু তার আগে তোমরা ভেবে বলতো এর সুবিধা কী?

বশু বললো, 'এটা তো সহজ কথা, বীজ থেকে গাছ হয়ে আম ধরা পর্যন্ত লম্বা সময় লাগে। গ্রাফটিং করলে আগে

থেকেই গাছ থাকবে, বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না'। সেতু বলল, ‘বসু ঠিক বলেছে, তাড়াতাড়ি ফল পাওয়া যাবে, তাই না চাচা!’

করিম চাচা বললেন, 'হ! তাছাড়া এভাবে জোড় লাগানো গাছে মা গাছের প্রায় সব গুণাগুন ও স্বাদ অক্ষুন্ন থাকে এবং চাইলে এর মাধ্যমে চারা তৈরি করে সারা দেশে উন্নত জাতের গাছ ছড়িয়ে দেয়া যায়। রিক্তা বলল, ‘বুঝেছি খুব, এবার তো আমাদের কাজটা শেখানো শুরু করেন, চাচা!’

করিম চাচা সবাইকে শেখানো শুরু করলেন। তিনি তাদের কী কী শেখালেন এবার সবাই জেনে নিই-

গ্রাফটিং বা জোড় কলম

'প্রাফটিং এর আরেক নাম হলো জোড় কলম। জোড় কলমে দুটি গাছ লাগবে। একটি হলো- মাতৃগাছ অর্থাৎ যে গাছ থেকে ডাল নেয়া হবে, অন্যটি হলো যে গাছে জোড়া লাগানো হবে সেই গাছ। আমরা যে গাছের সাথে নতুন একটি ভাল এনে জোড়া লাগাবো ঐ গাছটিকে আদিজোড় (Root stock) বলে। এখানে রিক্তাদের বাড়ির টক আম গাছে যদি সেতুদের মিষ্টি জাতের ডাল জোড়া লাগানো হয়। তাহলে রিক্তাদের টক আম গাছটি হলো আদিজোড়।

অন্যদিকে চাহিদাকৃত যে ডালটি এনে আদিজোড়ের সাথে জোড়া লাগানো হবে তাকে উপজোড় বলে। এখানে সেতুদের মিষ্টি আম গাছ হতে ডাল এনে রিক্তাদের টক আম গাছে জোড়া লাগানো হলে মিষ্টি আম গাছের ডালটি হলো উপজোড়। উপজোড়ের আরেক নাম হলো সায়ন (Scion ) ।

গাছের আদিজোড় ও উপজোড় পরস্পর সংযুক্ত হয়ে যখন একটি একক গাছ হিসেবে বড় হয়ে উঠে তখন এ প্রক্রিয়াকে

জোড় কলম বা গ্রাফটিং বলে। সহজভাবে বলা যায়, জোড় কলমের জোড়া স্থানের নিচের অংশকে আদিজোড় এবং উপরের অংশ হলো উপজোড় বা সায়ন।

তোমরা নিশ্চয়ই গ্রাফটিং বা জোড় কলম এর জন্য প্রয়োজনীয় আদিজোড় ও উপজোড় বুঝতে ও চিনতে পেরেছ। চাহিদা অনুযায়ী উপজোড় সংগ্রহ করে আদিজোড়ের সাথে জোড়া লাগিয়ে নতুন চারা বা কলম তৈরি করা হয়।

 

কী কী গাছে গ্রাফটিং করা যায়

সাধারণত লেবু, আম, কাঁঠাল, সফেদা, কুল/বড়ই, গোলাপ ইত্যাদি গাছে এ ধরনের কলম বা গ্রাফটিং করা হয়। দ্বিবীজপত্রী সকল গাছেই গ্রাফটিং করা যায়।

আদিজোড় ও উপজোড় নির্বাচনের ক্ষেত্রে তোমাদেরকে কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন

 

আদিজোড় নির্বাচনের ক্ষেত্রে লক্ষ্যনীয়

কোনো গাছের চারাকে যদি আদি জোড় (Root stock) হিসেবে নেয়া হয়, তাহলে এর বয়স এক থেকে দেড় বছর হতে হবে। আবার যদি বড় গাছের একটি শাখাওকে আদিজোড় হিসেবে নেয়া হয়, তাহলে উক্ত শাখার বয়সও এক থেকে দেড় বছর হতে হবে। তবে গোলাপের ক্ষেত্রে বয়স হবে ৩-৪ মাস হতে হয়। গোলাপ গাছের ক্ষেত্রে ১ সে. মি. ডায়ামিটার হতে হবে।

  • চারা স্বাস্থ্যবান, নিরোগ ও পেন্সিলের মত মোটা হতে হবে।
  • চারা বা শাখাটি শক্ত কাঠের মত হতে হবে।

উপজোড় নির্বাচনের ক্ষেত্রে লক্ষ্যনীয়।

  •  একটি সুস্থ সবল বড় গাছ হতে উপজোড় সংগ্রহ করতে হবে।
  •  উপজোড় শাখার বয়স আদিজোড় শাখার বয়সের সমান হতে হবে।
  • উপজোড় শাখার আকার আদিজোড় শাখার সমান হতে হবে।

উপযুক্ত সময়

বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাস এই কলম করার উপযুক্ত সময়। অর্থাৎ বর্ষার ঠিক আগে আগে জোড় কলম করার জন্য ভালো সময়।

কলম করার যন্ত্রপাতি ও উপকরণ:

কলম করার জন্য কিছু যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়। সেগুলো হলো:

করিম চাচা তাদেরকে ২/৩ দিন ধরে গ্রাফটিং হাতে কলমে শেখালেন এবং অনেক অজানা তথ্য তাদের জানালেন। তিনি বললেন, মজার বিষয় হলো, আজকাল অনেকেই গ্রাফটিং করে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে অনেক উপার্জন করে থাকেন। কেউ কেউ আবার গ্রাফটিং করার ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে ছেড়ে দিয়েও অনেক আয় করেন। তোমরাও ইচ্ছে করলে ইন্টারনেটের বিভিন্ন পেইজ থেকে, ইউটিউব থেকে গ্রাফটিং করা শিখতে পারো। আমাদের সরকারি হর্টিকালচার সেন্টার অথবা উপজেলা কমপ্লেক্সে কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন। তোমরা ইচ্ছে করণে তাদের কাছ থেকেও সহায়ক পরামর্শ নিতে পারো সরকারিভাবে তারা অনেক সময় এই ধরনের গ্রাফটিং এর উপর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। গ্রাফটিং শিখে তোমরা নিজেরাই একগাছে নানা রঙের ফুল ফোটাতে পারবে, নিজের বা অন্যের নার্সারিতে সহায়তা করতে পারবে। স্থানীয় কোনো সাধারণ জাতের সাথে গ্রাফটিং এর মাধ্যমে অনেক উন্নত জাতের ফুল ও ফলের চারা তৈরি করা সম্ভব। ফলন ভালো হচ্ছে না এরকম কোনো গাছে তোমরা ইচ্ছে করলেই গ্রাফটিং করে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারবে। তবে, মনে রাখবে একবার চেষ্টাতেই সবাই কাজটিতে সফল নাও হতে পারো। এটা বিশেষ সুখ একটি কাজ তাই কাজটি মনোযোগ দিয়ে৷ ধৈর্য সহকারে বার বার অনুশীলন করে হাত পাকাপোক্ত করতে হবে।

সেতু, বশু মিলন ও রিক্তা প্রত্যেকেই নিজেদের টবে কিংবা বাগানে একটা করে গাছে গ্রাফটিং করেছে। ওরা এগুলোর নিয়মিত পরিচর্যা করে যাচ্ছে। খুব শীঘ্রই তারা ফলন দেখতে পাবে। আর ফলনের খেয়ে দেখার আগাম আমন্ত্রণ তারা করিম চাচাকে জানিয়ে রেখেছে। এবার শুধু খুশি মনে অপেক্ষার পালা।

অভিবাবকের মতামত 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

কাজটি করতে গিয়ে আমার অনুভূতি

(ভালো লাগা, মন্দ লাগা, কাজটি করতে গিয়ে আঘাত পাওয়া কিংবা কোনো বাধার সম্মুখীন হওয়া এবং নতুন কী দিয়েছো তা এখানে লিখ) 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

শিক্ষকের মন্তব্য:

 

 

 

 

Content added || updated By